Email : weekly Surjodoy.us@gmail.com
JamalChowdhury 111@yahoo.com
Website:weekly-Surjodoy.com
অ্যান্টিবায়োটিক, ভ্যাকসিন ও লাইফস্টাইল-খাদ্যাভ্যাস - এ তিনটি ভালো আবিষ্কার মানবস্বাস্থ্যের গতি-প্রকৃতিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। একটা সময় ছিল সংক্রামক রোগে মানুষ বেশি মারা যেত। তখন সংক্রামক রোগের কারণ এবং চিকিৎসা জানা ছিলই না বলা যায়। এখন অধিকাংশ সংক্রামক রোগের কারণ জানার পর তার থেকে পরিত্রাণে আবিষ্কৃত হয়েছে অ্যান্টিবায়োটিক ও ভ্যাকসিন। বর্তমানে অসংক্রামক বা জীবানাচার জটিলতায় মারা যাচ্ছে ৭৯ শতাংশ মানুষ। এতে অ্যান্টিবায়োটিক-ভ্যাকসিনের কোনো ভূমিকাই নেই। আগেকার মানুষ ন্যাচারাল খাবারে অভ্যস্ত ছিল আর এখনকার মানুষ অভ্যস্ত হলো বেকিং-ফ্রাইং ও ফাস্ট ফুডে। ফলে এখন লাইফস্টাইল ডিজিজ যেমন হার্ট ডিজিজসহ অন্যান্য নন-কমিইউনিকেবল ডিজিজ বাড়ছে মহামারীর মতোই।
পৃথিবীর কোনো অঞ্চল খারাপ লোকের নেতৃত্বের কারণে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে যায়, সে দুর্ভোগের অন্ধকার চিরে প্রতিক্রিয়াস্বরূপ বেরিয়ে আসে একদল ভালো লোক যারা দুর্ভোগে পড়া অসহায় লোকজনকে উদ্ধার করেছে। এসব ভালো লোক আপনা হতে তৈরি হয়নি। কোনো না কোনো মহামানব, ভালো মানুষ গড়ার পেছনে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করেছে। ভ্যারিওলেশন বা ভ্যাকসিনেশনের ব্যাপারটাও তাই। মানুষ যখন মহামারীতে আক্রান্ত হতো, অল্পসংখ্যক কিছু লোক চিন্তা করত, অনেক পরিশ্রম করত এই উদ্দেশ্য যে কিভাবে এই বিপদে পড়া লোকগুলোকে উদ্ধার করা যায়। ৪২৯ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে গ্রিক ইতিহাসবিদ থুসিডিডেস লক্ষ্য করেন যে এথেন্স শহরে যেসব রোগী স্মল পক্সে আক্রান্ত হওয়ার পর বেঁচে যাচ্ছে তাদের আবার আর এ রোগটি হচ্ছে না। এটি ছিল একজন বুদ্ধিমান মানুষের পর্যবেক্ষণ। পরে এটি মানুষের ভাবনার কারণ হলো; অথচ এই জীবাণুটা কি সেটিও তখনকার মানুষের জানা ছিল না। পরে মানুষের ভাবনায় এলো যে নিশ্চয়ই এই রোগ জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার মধ্যেই আবার আক্রান্ত না হওয়ার বীজ লুকায়িত আছে। পরে চীনারা সর্বপ্রথম ১০ম শতাব্দীর শুরুতে ভ্যাকসিনেশনের আদি রূপ ভ্যারিওলেশন আবিষ্কার করে। ভ্যারিওলেশন নামটিও এসেছে ল্যাটিন শব্দ ‘ভেরাস’ যার মানে হলো ‘চামড়ায় দাগ দেয়া’। এ প্রক্রিয়ায় গুটিবসন্ত রোগে আক্রান্তদের দেহের পাঁচড়া বা শুকনো পুঁজ নিয়ে তা সুস্থ মানুষের নাকে কিংবা চামড়ায় ঢুকিয়ে দিত। তাতে ১-২ শতাংশ লোক গুটিবসন্ত রোগে মারা গেলেও বাকিরা অনেকেই হালকা ধরনের বসন্ত হয়ে তা থেকে রক্ষা পেত। ১৭০০ শতাব্দীতে ভ্যারিওলেশন পদ্ধতির মাধ্যমে বসন্ত রোগ প্রতিরোধ সিস্টেম আফ্রিকা, ভারত ও তুরস্কসহ ওসমানীয় সাম্রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
এটি ল্যাটিন শব্দ ভেক্কা মানে গরু, আর ভ্যাকসিনিয়া মানে গরুর বসন্ত থেকে ডা: জেনার নাম দেন ভ্যাকসিনেশন। আধুনিক ভ্যাকসিনের আবিষ্কার যাত্রা শুরু হয় ওই ওখান থেকেই ২২৬ বছর আগে ১৭৯৬ সালে। ব্রিটিশ চিকিৎসক ডা: এডওয়ার্ড জেনার আধুনিক ভ্যাকসিনেশন আবিষ্কারের সূচনা করেন, এ জন্য তাকে ‘ফাদার অব ইমিউনোলজি’ বলা হয়। মেডিক্যালে অধ্যয়নকালে জেনার লক্ষ্য করেন যে, গ্রাম্য এলাকায় গোয়ালাদের স্মল পক্স হয় না; কারণ এরই মধ্যে তারা কাউ পক্স দ্বারা আক্রান্ত হয়ে আছে। কাউ পক্স মানুষকে আক্রান্ত করলেও তা হতো খুব হালকা ধরনের। কিন্তু মানুষকে আক্রান্ত করত যে বসন্ত জীবাণু তা দিয়ে অনেকে মারা যেত, অনেকে অন্ধ হতো আবার অনকেই বসন্তের ক্ষতচিহ্ন নিয়ে সারা জীবন কাটিয়ে দিত। ফলে ডা: জেনার ভাবলেন নিশ্চয়ই এই হালকাভাবে গরুর পক্স দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার মধ্যেই গুটিবসন্তে আক্রান্ত মানুষদের বড় ধরনের বসন্ত থেকে রক্ষার উপায় আছে। ১৪ মে, ১৭৯৬ সালে তিনি গরুর পক্স দ্বারা আক্রান্ত এক গোয়ালিনী যার নাম ছিল সারাহ নেমলেস তার হাত থেকে পুঁজ নিয়ে আট বছরের এক বালক যার নাম ছিল জেমস ফিপ্স তার হাতে আচরে দেন। গরুর পক্স হওয়ার কারণে বালকটির শরীরে সামান্য জ্বর ও কয়েকটি ব্লিস্টার হয়ে খুব তাড়াতাড়ি সেরে ওঠে। ছয় সপ্তাহ পর অর্থাৎ ১ জুলাই, ১৭৯৬ সালে ডা: জেনার আবার ওই বালকের শরীরে মানুষকে আক্রান্ত করা স্মল পক্স জীবাণু প্রবেশ করান। সৌভাগ্যবশত বাচ্চাটির স্মল পক্স হলোনা। ডা: জেনার বুঝে গেলেন যে গরুকে আক্রান্ত করা কাউ পক্স জীবাণু ছেলেটির শরীরে ঢুকানোর কারণে বালকটির শরীরে একধরনের প্রতিরোধ তৈরি হয়েছে, তার কারণেই বালকটি আক্রান্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে।
এভাবেই ভ্যাকসিনিয়া ভাইরাস বা কাউ পক্স জীবাণু ঢুকিয়ে দিয়ে তার মাধ্যমে শরীরের ভেতর ইমিউনিটি তৈরি করে মানুষকে আক্রান্ত করার স্মল পক্স ভ্যাকসিন এর ক্লু খুঁজে পান ডা: জেনার। এর পর থেকে একটা দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ভ্যাকসিন আজকের এ পর্যায়ে পৌঁছেছে। কিন্তু বিস্ময়কর সত্য হলো, স্মল পক্স ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পর ১০০ বছর মানুষ আরো অনেক মহামারীর মোকাবেলা করলেও অষ্টাদশ শতাব্দীতে ভ্যাকসিন জগতের তেমন কোনো উন্নতি ছিল না।
ঊনবিংশ শতাব্দীতে ডা: জেনারের মডেল অনুসরণ করেই পোলিও, পার্টোসিস, টিটেনাস, মিসলস ইত্যাদির টিকা আবিষ্কারের পালে হাওয়া লাগে। ১৮৭৭ সালে লুইস পাস্তুর রোগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে ‘জার্ম থিওরি’ প্রদান করেন। ১৮৮২ সালে রবার্ট কোচ যক্ষার জীবাণু মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলসিস আবিষ্কার করেন।
লুইস পাস্তুর চিকেন কলেরা, জলাতঙ্ক ও এনথ্রাক্স ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেন। ১৮৮৮ সালে এমিল রক্স নামক বিজ্ঞানী আবিষ্কার করেন ডিপথেরিয়া টক্সিন এবং ১৯০১ সালে নোবেল বিজয়ী এমিল ভন বেরিং আবিষ্কৃত করেন ডিপথেরিয়া-টিটেনাস অ্যান্টিটক্সিন। এখানে মজার বিষয় হলো ডা: জেনার ও লুইস পাস্তুর উভয়েই বেশ কয়েকটি ভ্যাকসিনের জনক, অথচ ওই সময়ে ভাইরাসের অস্তিত্ব সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণাই ছিল না। ১৮৯২ সালে দিমিত্রি ইভানস্কি ও মার্টিনাস বেইজারিংকই প্রথমে ভাইরাস পার্টিকেলের ধারণা দেন। এটি আসলে কি জিনিস তা জানা গেল নোবেল বিজয়ী আরনেস্ক রুস্কার ১৯৩১ সালে ইলেকট্রন মাইক্রোসকোপ আবিষ্কারের পর। রোগজীবাণু আবিষ্কারের আগেই তার ভ্যাকসিন আবিষ্কার বিস্ময়কর বটে। তারও আগে ১৬৭৬ সালে প্রথম আবিষ্কৃত হয় ব্যাকটেরিয়া।
১৯২৩ সালে গ্যাস্টন রেমন কর্তৃক ডিপথেরিয়ার প্রথম ভ্যাকসিন এবং ১৯২৪ সালে জর্জ এফ ডিক কর্তৃক স্কারলেট ফিভার ভ্যাকসিন, ১৯২৬ সালে লেইলা ডেনমার্ক কর্তৃক পার্টোসিস প্রথম ভ্যাকসিন, ১৯৩২ সালে ম্যাক্স থেইলার কর্তৃক ইয়োলো ফিভার, ১৯৩৭ সালে রুডলফ ওয়েগল কর্তৃক টাইফাস এবং ১৯৪১ সালে টিক বর্ণ এনকেফালাইটিস ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হয়। ১৯২৮ সালে আলেক্সান্ডার ফ্লেমিং কর্তৃক আবিষ্কৃত হয় ‘পেনিসিলিন’ নামক এক মিরাকল অ্যান্টিবায়োটিক, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল। ১৯৩০ সালে টিসু কালচার করে ভাইরাস উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু। ফলে ভাইরাল ভ্যাকসিন আবিষ্কারের নবদিগন্ত উন্মোচিত হয়। ১৯৩৭ সালে এনাটল সমরডিন্টসেভ কর্তৃক প্রথম ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হয় তবে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয় ১৯৪৫ সালে। এডেনোভাইরাস, ওরাল পোলিও, নিউমোনিয়া ও মেনিঞ্জাইটিস ভ্যাকসিন যথাক্রমে ১৯৫৭, ১৯৬৩, ১৯৭৭ ও ১৯৭৮ সালে আবিষ্কৃত হয়। ১৯৮১ সালে হেপাটাইটিস বি, ১৯৮৪ সালে চিকেন পক্স, ১৯৮৫ সালে হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপ বি, ১৯৮৯ সালে কিউ ফিভার, ১৯৯১ সালে হেপাটাইটিস এ ভ্যাকসিন, ১৯৯৮ সালে লাইম ডিজিজ ও রোটা ভাইরাস ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হয়।
১৯৫২ সালে জোসেফ সাক কর্তৃক পোলিও সাক ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হয়। ১৯৬৩, ১৯৬৭ ও ১৯৭০ সালে যথাক্রমে মিসলস, মাম্পস ও রুবেলা ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হয়।
১৯৯৮ সালের ৩১ আগস্ট থেকে টেট্রাভ্যালেন্ট রোটা ভাইরাস টিকা কার্যক্রম চালু হয়। ফলে রোটা ভাইরাস ডায়রিয়া এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। এই ১৯৯৮ সালের ২৬ আগস্ট নতুন নতুন যুগোপযোগী ভ্যাকসিন আবিষ্কার এবং গরিব দেশের শিশুদের সুরক্ষার জন্য বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে ১২ কোটি ৫০ ডলার এবং ২০১০ সালে ‘দশকের ভ্যাকসিন’ নামকরণে ১০ বিলিয়ন ডলার অনুদান হিসেবে দেন।
১৯৬৭ সালের পর ইউএসকে প্রথম হাম রোগ মুক্ত ঘোষণা ২০০০ সালে। ২০০২ সালের ২১ জুন গোটা ইউরোপকে পোলিও মুক্ত ঘোষণা। ২০০৩ সালের ১৭ জুলাই প্রথম ইন্ট্রান্যাজাল ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু। প্রথম মেনিংগোকক্কাল এবং ডিপথেরিয়া টক্সয়েড ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু ২০০৫ সালের ২১ মার্চ। ২০০৬ সালের ৮ জুন সার্ভাইকাল ক্যান্সার প্রতিরোধী হিউমান পেপিলোমা ভাইরাসের প্রয়োগ শুরু। ২০০৭ সালে বিশ্ববাসী পায় মহামারী সৃষ্টিকারী এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা এইচ৫এন১ বিরোধী ভ্যাকসিন। ২০০৯ সালে এফডিএ ইনফ্লুয়েঞ্জা এইচ১এন১এর চারটি ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেয়। ২০১১ সালে নিউমোকক্কাল ভ্যাকসিন পঞ্চাশোর্ধ্বদের জন্য অনুমোদন দেয় এফডিএ। ২০১২ সালের ২০ নভেম্বর ইনফ্লুয়েঞ্জার সিজনাল ভ্যাকসিন শুরু হয়ে যায়, যা প্রতি বছরেই দিতে হয়।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ‘আমেরিকান ন্যাশনাল এডাল্ট ইমিউনিজেশন প্ল্যান’ এর অধীনে বয়স্কদের মধ্যে টিকা দান কার্যক্রম ব্যাপক ভিত্তিতে শুরু করেন। এর অধীনে ইনফ্লুয়েঞ্জা, মেনিংগোকক্কাল, নিউমোকক্কাল, র্যাবিজ, হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি ধরনের ভ্যাকসিন বয়স্কদের মাঝে রুটিনমাফিক দিতে থাকেন।
২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হাম রোগটিকে আমেরিকা থেকে দূর হয়েছে বলে ঘোষণা করেন। ২০১৮ সালে আমেরিকাতে ‘এডাল্ট ইমিউনাইজেশন শিডিউল’ ঘোষণা করেন। এই ২০১৮ সালেই হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস ভ্যাকসিন বয়স্কদের মধ্যে চালু করেন এফডিএ। সর্বশেষে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোভিড১৯ কে পাবলিক হেলথ ইমারজেন্সি ঘোষণা করেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০২০ সালের ১১ ডিসেম্বর ফাইজার-বায়োন্টেক এবং ২০ ডিসেম্বর মডার্না, ২৭ ফেব্রুয়ারি জনশন অ্যান্ড জনশনকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রয়োগের প্রথম অনুমতি দেয়। ১৪ মে ফাইজার অনুমতি পায় ১২-১৫ বছরের শিশুদের ভ্যাকসিন দেয়ার। ১২ আগস্ট তারিখে ফাইজার ও মডার্নার ইমিউনো কম্প্রোমাইজড রোগীদের বুস্টার ডোজের অনুমতি মেলে। বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ৭টি ভ্যাকসিন এ দেশে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে।
১৯৭৭ সালে ইবোলা ভাইরাস আবিষ্কৃত হলেও এর ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হয় ২০১৯ সালে। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর সারসকভ-২ করোনা ভাইরাসটি আবিষ্কারের পর মাত্র এক বছরের ব্যবধানে ডিসেম্বর ২০২০ সালে আবিষ্কৃত হয় কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন। হিউমান ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস দিয়ে যে এইডস হচ্ছে তা মূলত আক্রান্ত করে মানুষের ইমিউন সিস্টেমকে। আর টিকা মানুষের শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে কাজে লাগিয়েই অ্যান্টিবডি তৈরি করে। যেহেতু যাকে দিয়ে অ্যান্টিবডি তৈরি করবে সেই ইমিউন সিস্টেমই অসুস্থ। সে অ্যান্টিবডি তৈরি করবে কী করে।
কম্বাইন্ড ভ্যাকসিন হলো এমন ধরনের একাধিক সংমিশ্রিত ভ্যাকসিন, যার প্রয়োগে একই সাথে একাধিক সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় প্রতিরোধ গড়ে ওঠে গুণগত মান অক্ষুণ্ণ রেখে। ১৯৪০ এর দশক থেকে কম্বাইনড ভ্যাকসিন আবিষ্কার শুরু হয়। ১৯৪৭ সালে ডিটি (ডিপথেরিয়া টিটেনাস) এবং ১৯৪৯ সালে ডিপিটি টিকা দেয়ার লাইসেন্সপ্রাপ্ত হয়।
মুরিস হলোম্যান ১৯৭২ সালে এমআর এবং এমএমআর নামক কম্বাইন্ড ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেন। এমএমআরভি কম্বাইন্ড ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হয় ২০০৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর। ১৯৮০-এর দশকে সাতটি ভ্যাকসিন এর কম্বাইন্ড ডোজ। ডিপিটি এবং এমএমআর ও পোলিও ভ্যাকসিন। ১৯৯৩ সালের মার্চ মাস থেকে শুরু হয় হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপ বি এবং ডিপিটি কম্বাইন্ড ভ্যাকসিন ডোজ। ১৯৯৪ সালে চালু হয় টাইফয়েড ইঞ্জেক্টেবল ভ্যাকসিন। কম্বাইন্ড হিমোফালাস ইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপ বি এবং হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন ব্যবহার শুরু ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর। বর্তমানে বাচ্চারা দুই বছরে মোট ২৭টি টিকার ডোজ নেয়। প্রতি সিটিং এ ছয়টি ডোজও নেয়া হয়।
জার্মান বিজ্ঞানী এমিল ভন বেহরিং ডিপথেরিয়া চিকিৎসায় ব্যবহৃত সিরাম থেরাপি আবিষ্কারের জন্য ১৯০১ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। নোবেল পুরস্কার প্রবর্তনের পর চিকিৎসাবিজ্ঞানে তিনিই প্রথম ভ্যাকসিন আবিষ্কারের স্বীকৃতিস্বরূপ নোবেল পুরস্কার পান। অথচ ৪০টিরও বেশি ভ্যাকসিন আবিষ্কারের জনক মুরিস হিলোম্যান ২০০৫ সাল পর্যন্ত জীবিত থেকেও নোবেল প্রাইজ পাননি শুধু তার প্রচারবিমুখ ভ‚মিকার কারণে। ১৯২০ সালের শেষ দিকে ডিপথেরিয়া, ধনুষ্টংকার ও যক্ষার ভ্যাকসিন সহজলভ্য হয়ে যায়। পৃথিবীজুড়ে ভ্যাকসিনেশন বা টিকাদান কর্মসূচি ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৫৫ সালে ইংল্যান্ডে প্রথম পোলিও ভ্যাকসিনেশন কর্মসূচি জাদুকরী ফল দেয়।
১৯৭৪ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সারা পৃথিবীর প্রতিটি শিশুকে টিকাদানের প্রত্যয়ে ডিপথেরিয়া, পার্টোসিস, টিটেনাস, পলিও মায়েলাইটিস, হাম ও যক্ষা - এই ছয়টি রোগ নির্মূলে এক্সপান্ডেড প্রোগ্রাম অন ইমিউনাইজেশন বা ইপিআই চালু করে। এ ছাড়াও ইয়েলো ফিভার ও হেপাটাইটিস-বি টিকা চালু করে বেশ কয়েকটি দেশে। লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় যে ১৯৯০ সালের মধ্যেই সব শিশুকেই এই ছয়টি টিকা প্রদান করা হবে। যদিও ২০১৯ সালে এসে দেখা যাচ্ছে মাত্র ৮৫ শতাংশ শিশু এই ছয়টি রোগের বিরুদ্ধে টিকা দান সম্পন্ন করেছে। কোভিড-১৯ এর কারণে ২০২০ সালে সব ধরনের টিকা দান কর্মসূচি ভালোভাবেই বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা।
...